শীতকালীন শাক-সবজি এবং ফলের পুষ্টিগুণাগুণ!

বছরের প্রায় সব সময়ই কম বেশি শাক সবজি, ফলফলাদি থাকে । কিন্তু শীতকাল মানেই বাজার ভর্তি শাকসবজি, ফলমূল। আর শীতকালের শাকসবজি ও ফলের স্বাদ ও পুষ্টি থাকে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি।

শীতকালীন শাক-সবজি

শীতের সময়টায় বাজারে বেশি দেখা যায় ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, লালশাক, পালংশাক, মূলা, শালগম, সিম, টমেটো, পেঁয়াজ পাতা, মটরশুঁটি ও গাজর।

নিউট্রিশিয়ানদের মতে, শীতকালীন সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফলিক অ্যসিড, অ্যন্টিঅক্সিডেন্ট, আঁশ ও ভিটামিন। অস্থিক্ষয় রোধে ও শরীরের রক্তকণিকা বা প্লাটিলেট গঠনে শীত কালীন শাকসবজির ভূমিকা অপরিসীম। ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘এ’ ও ভিটামিন ‘ই’ এর ঘাটতি পূরণে খেতে হবে বেশি বেশি শীত কালীন শাকসবজি। শীত কালীন শাকসবজিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ‘ই’ যা মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে বের করে আনে।

পুষ্টিগুণে লালশাক ও পালং শাক অন্যান্য শাকগুলো থেকে একটু এগিয়ে। প্রতি একশ গ্রাম লাল শাকে রয়েছে তিনশ আশি গ্রাম ক্যালসিয়াম! অন্যান্য পুষ্টিগুনও লাল শাকে অন্য শাকের তুলনায় বেশি। আর পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ও ফলিক অ্যাসিড, যা আমাদের দেহের জন্য জরুরি।

শীতকালীন সবজি মটরশুঁটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি, প্রতি একশ গ্রামে পাওয়া যায় প্রায় সত্তর ক্যালরি! আর ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘সি’, ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ও পানি। ফুলকপিতে এমন কিছু উপাদান আছে যা কিডনির পাথর গলাতে ও ক্যানসার নিরাময়ে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে।

রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে উন্নত দেশের মানুষজন টমেটো ও টমেটোজাত খাদ্য, পালং শাক, মিষ্টি আলু ইত্যাদি খাবার প্রচুর পরিমাণে খেয়ে থাকেন।

গাজর স্বাস্থ্যের জন্য অনেক জরুরী। চোখ ও দাঁতের সুরক্ষায়, লিভার সুস্থ রাখতে ও ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে খেতে পারেন শীত কালীন সবজি গাজর। এতে রয়েছে থায়ামিন, নিয়াসিন, ভিটামিন ‘বি৬’, ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘কে’, ফাইবার, ম্যাংগানিজ ও পটাশিয়াম। বেশি বেশি গাজর খেলে পেট ভরবে কিন্তু বেশি ক্যালরি যোগ হবে না শরীরে তাই ওজন কমাতে ও হেলদি ত্বক পেতে বেশি বেশি গাজর খান।

শীতকালীন medistorebd 1

শীতকালীন ফলফলাদি

এই মৌসুমে বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন জাতের ও বিভিন্ন দামের কুল বা বরই, কমলালেবু, জলপাই, আমলকী, আপেল, সফেদা ও ডালিম।

শীতের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে নানান জাতের কুল বা বরই। বরই হরেক রকম হয়ে থাকে যেমনঃ নারকেল বরই, আপেল বরই, বাউ কুল। শীত কালীন এই ফলটি বেশ উপকারী ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন।

কমলায় রয়েছে ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘বি কমপ্লেক্স’, ফাইবার ও মিনারেল যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য জরুরী। কমলালেবুকে ক্যান্সার প্রতিরোধক বলা হয়ে থাকে।

শীতকালীন ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফল হচ্ছে জলপাই। উচ্চরক্তচাপ, কোষ্ঠকাঠিন্য ও কোলনের পাকস্থলির ক্যানসার দূর করতে জলপাই এর ভূমিকা অপরিসীম। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এই ফলে আরো রয়েছে ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘ই’।

ভিটামিন ‘সি’ এর রাজা হিসেবে খ্যাত শীত কালীন ফল আমলকী। ত্বক সুরক্ষা, মাঢ়ি মজবুত করতে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে পালন করে আমলকী।

সারাবছর পাওয়া গেলেও শীতকালে বেশি পাওয়া যায় প্রচুর আঁশযুক্ত ফল আপেল। এতে আছে ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘বি১’, ভিটামিন ‘বি১২’, ভিটামিন ‘বি৬’ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আপেল কোষ্ঠকাঠিন্য ও বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে থাকে।

শীতকালীন medistorebd 2

শীতকালীন আর একটি ফল হল সফেদা। আমাদের দেশে এই ফলটি একসময় তেমন একটা পরিচিত ছিল না কিন্তু এখন এই ফলটি প্রিয় ফলের তালিকায় চলে আসছে এর পুষ্টিগুনের কারণে। ক্যান্সার প্রতিরোধক, কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণ, কিডনি সুরক্ষায় ও হেলদি ত্বকের জন্য, কোলেস্টেরল ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। সফেদায় রয়েছে- ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘বি কমপ্লেক্স’, পটাশিয়াম, কপার, আয়রন, ফাইবার।

শীত কালীন অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও রসালো ফলের মাঝে অন্যতম হচ্ছে বেদানা বা আনার, অনেকে ডালিমও বলে থাকে। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘সি’। বেদানার রস কুষ্ঠরোগ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও হার্ট ভাল রাখতে বেশ উপকারী।

শীতের সময়টায় সুস্থ্য ও সুন্দর থাকতে বেশি বেশি শীতকালীন ফল ও সবজি খান।

 

Leave a Reply

Main Menu